ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় শেষ মুর্হুতে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা, গভীর রাতেও সরগরম মার্কেট

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৭ জুন অনুষ্ঠিত হবে মুসলমান সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। আর এই উৎসবকে ঘিরে রমজান মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চকরিয়া উপজেলা সদরে অবস্থিত অন্তত ১৮টি বিপনী বিতানে শুরু হয়েছে ঈদের কেনাকাটা। ঈদের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই জমজমাট হয়ে উঠেছে ঈদবাজার। বর্তমানে মার্কেটগুলোতে ক্রেতা-সাধারণের ভিড় বাড়ছে। গত বছর তীব্র গরমে ক্রেতা-সাধারণের হাঁসফাঁস হলেও এবার সেই অবস্থা নেই। প্রতিটি মার্কেটের অলি-গলিতে বসানো হয়েছে বড় আয়তনের একাধিক ফ্যান। ফলে শীতল হিমেল পরশে অনেকটা স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটা করতে পারছেন ক্রেতারা। দিনের বেলায় মার্কেটে সর্বশ্রেণীর ক্রেতার উপস্থিতি থাকলেও রাতে আসছেন নারী ক্রেতারা। চলছে গভীর রাত পর্যন্ত বেচাকেনা।

সরেজমিন দেখা গেছে, ঈদের কেনাকাটা করতে বর্তমানে নানা বয়সের ক্রেতারা বেশি ভিড় করছেন আনোয়ার শপিং কমপ্লেক্স, সিটি সেন্টার, ওয়েস্টার্ন প্লাজা, সুপার মার্কেট, নিউমার্কেট ও ওসান সিটি মার্কেটে। এসব মার্কেটে বেশি বিক্রি হচ্ছে রকমারি শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, পাঞ্জাবি, জুতাসহ নানা রকমের পণ্য। তবে প্রতিদিন পৌরশহর চিরিঙ্গার ঈদবাজারে আগত অন্তত লাখো ক্রেতাকে কাছে টানতে মারাত্মক শব্দদূষণের প্রতিযোগিতায় নেমেছে বেশ কয়েকটি মার্কেট। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সমানে মাইকে প্রচারের শব্দদূষণের কারণে অতিষ্ঠ স্থায়ী বাসিন্দারা।

এদিকে মার্কেট গুলোতে ঈদের কেনাকাটা করতে আগত ক্রেতাদের নিরাপত্তার জন্য থানা পুলিশের পক্ষ থেকে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। যাতে চোর, ছিনতাইকারী, ইভটিজার ও পকেটমারসহ উঠতি বয়সের মাস্তানরা মার্কেটে ঢুকে অপরাধমূলক কর্মকান্ড করতে না পারে। একইসঙ্গে পৌরসভার কমিউনিটি পুলিশ ও থানার পুলিশ মোড়ে মোড়ে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।

চকরিয়া থানার ওসি মো.বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ঈদের কেনাকাটা নিবিঘœ করতে রমজান মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে থানা পুলিশের তিনটি টিম চকরিয়া পৌরশহরের মার্কেট গুলোতে নজরদারিতে রয়েছে। চকরিয়া সুপার মার্কেটের সামনে বসানো হয়েছে অস্থায়ী পুলিশ ফাঁিড়। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মার্কেটের ভেতরে বাইরে পুলিশ সদস্যরা টহলে রয়েছে। সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা।

চকরিয়া শহরের আনোয়ার শপিং কমপ্লেক্সের চমক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ঈদের বাজার যেভাবে জমে ওঠেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমানে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। এ অবস্থায় দোকানের কর্মচারীরা একটু দম ফেলারও সময় পাচ্ছেন না। আমরা এবছরও ভাল ব্যবসা করতে পারবো বলে আশা রাখি।

চকরিয়া শহরের বিপনী বিতাণ গুলোর মধ্যে সুপার মার্কেটস্থ সৌদিয়া ক্লথ স্টোর বরাবারেই অভিজাত কাপড়ের দোকান হিসেবে ক্রেতা সাধারণের মাঝে ব্যাপক পরিচিত। প্রতিষ্ঠানটিতে শনিবার দুপুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের পদভারে দোকানটি টাসা। কোথাও বসার জায়গা নেই।

এবারের ঈদে সৌদিয়া ক্লথ স্টোরের চেয়ে আরো ভাল ব্যবসা করছেন আনোয়ার শপিং কমপ্লেক্সের বস্ত্র বিপনী ‘লিমন ফেব্রিক্স’ নামের অভিজাত কাপড়ের দোকান। প্রতিষ্ঠানটিতে ঈদ উপলক্ষে কাপড়ের সেরা কালেকশন তুলেছেন।

জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের মালিক তৌহিদুল ইসলাম রিমন বলেন, প্রতিবছর রোজার ঈদের সময় বেশি বিক্রির আশায় থাকেন দোকানিরা। এজন্য আগে থেকেই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রকমারি দেশি-বিদেশি শাড়ি, সালোয়ার কামিজসহ নানা ধরনের পণ্যের সমাহার ঘটানো হয়। নতুন প্রতিষ্ঠান হিসেবে এবছর লিমন ফেব্রিক্স সেরা কালেকশন নিয়ে এসেছে ক্রেতা সাধারণের জন্য।

তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদবাজারে নারীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ইন্ডিয়ান বিভিন্ন আইটেমের শাড়ি। এর মধ্যে জামদানি, কাতান, চেন্নাই শাড়ির চাহিদা বেশি। একইসঙ্গে হাতের কাজ করা শাড়িও কিনছেন অনেকে। আবার বিভিন্ন নামের সালোয়ার কামিজেরও কদর বেশি রয়েছে এবারের ঈদে।’ তিনি ধারণা করছেন, চাঁদ রাত মিলিয়ে এবছর তাঁর প্রতিষ্ঠানে বিক্রির টার্গেট এক কোটি টাকা অতিক্রম করবে।

ওয়েস্টান প্লাজা মার্কেটের হৃদয় ফ্যাশন নামের দোকান মালিক জাহেদুল ইসলাম বলেন, রমজানের শুরু থেকে মার্কেট গুলোতে ঈদের বেচাকেনা শুরু হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিনই প্রচুর ক্রেতা সমাগম হচ্ছে। ছোট্ট শিশুদের কাপড় বিক্রি হচ্ছে তুলনামুলক বেশি। অপরদিকে সেলাই করা সালোয়ার কামিজের প্রতি জোঁক রয়েছে নারী ক্রেতাদের।

চকরিয়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রেজাউল হক সওদাগর বলেন, ‘চকরিয়া পৌরশহর চিরিঙ্গায় ছোট-বড় বিপণি বিতান রয়েছে অন্তত ৩০টি। সেখানে প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে ভোররাত পর্যন্ত জমজমাট বিকিকিনি চলছে। ঈদবাজারে আগত ক্রেতাদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বিপণি বিতানগুলোর পক্ষ থেকে।’

চকরিয়া পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র বশিরুল আইয়ুব বলেন, চকরিয়া শহরে মার্কেট গুলোতে প্রতিদিন কম হলেও শিশুসহ লক্ষাধিক নারী-পুরুষ ক্রেতার আগমন ঘটে। ক্রেতা-সাধারণের নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পৌরসভার কমিউনিটি পুলিশকে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নিয়োজিত করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সড়কে চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে সকল ধরনের অবৈধ এবং ভাসমান দোকান-পাট উচ্ছেদ করা হয় রমজান শুরুর আগে থেকে।’

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ওসি বলেন, মার্কেটের ভেতরে আগত ক্রেতারা যাতে কোনো ধরনের নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় না পড়েন সেইজন্য সেজন্য বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও আনসার সদস্য নিয়োজিত রাখা হয়েছে। বসানো হয়েছে সিসি ক্যামরা। রোজার শেষ সপ্তাহে ঈদ বাজারে নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশের আরো কয়েকটি ইউনিটকে মাঠে নামানো হবে। পাশাপাশি নারী ক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং ইভটিজারদের দৌরাত্ম বন্ধে থাকবে নারী পুলিশ সদস্যরা। #

পাঠকের মতামত: